জুব্বা পরিধান করা কি সুন্নত নাকি আরবীদের প্রথা?
জুব্বা পরিধান করা কি সুন্নত নাকি আরবীদের প্রথা?
উমদাতুল ক্বারী শরহে সহিহিল বুখারীতে বদরুদ্দীন আঈনী মারফু হাদীস নকল করেছেন।
احب الثياب الي رسول الله ﷺ القميص
আল্লাহর রাসুল (সা) এর কাছে প্রিয় পোশাক ছিলো কামিস। তাহলে আমরা বলতে পারি জুব্বা বা কামিস পড়া সুন্নাত। যে বললো ইসলামে নির্ধারিত কোনো পোশাক নেই। তারা ঐ যে মাস্টার মার্কা মৌলভী বানাতে চায়। অর্থাৎ প্যান্ট, টাই পড়েন আলেমরা সমস্যা নেই তবে বাংলাদেশে দাওয়াত পাবেন না প্যান্ট-শার্ট পড়লে। এজন্য পড়তে পারছেনা। তবে ফতুয়া চালিয়ে যাচ্ছে যদি কোনো একদিন মিশরের মত পরিবেশ হয়, ওখানে তো প্যান্ট শার্ট লাগিয়ে খতিবরা মিম্বারে উঠে যায় খুতবা দিতে।
পোশাক এর কথা কোরআনেও আছে।
হযরত ইউছুফ (আঃ) এর ভাইয়েরা ইউসুফ (আঃ)কে হত্যার পর বানোয়াট খবর সাজিয়ে যে পোশাকটি নিয়ে এসেছিলো, ওটাকেও আল্লাহ তায়ালা কামিস বলেছেন।
وجاءوا علي قميصه بدم كذب
সূরা ইউসুফ, আয়াত নং ১৮
তারা হযরত ইয়াকুবের কাছে তার মিথ্যা রক্তমাখা কামিস নিয়ে আসলো। তাহলে বুঝা যায়, কামিস পরিধান করা হযরত ইয়াকুব (আঃ) এরও সুন্নাত এবং হযরত ইউসুফ (আঃ) এরও সুন্নাত। হযরত ইয়াকুব (আঃ) নিজে করেননি শুধু বরং তার বাবাকেও দেখেছেন। তাহলে বুঝা যায় জুব্বা ও কামিস শুধু আরবীদের পোশাক নয়। বরং আল্লাহর রাসুল (সা) এর আগে যত নবীগন ছিলো তাদেরও সুন্নাত। ইউসুফ (আঃ)ও কামিস পড়তেন, ইয়াকুব (আঃ)ও কামিস পরতেন। ইউসুফ (আঃ) যে কামিস পড়তেন তার প্রমান কি?
সূরা ইউসুফ, ৯৩ নং আয়াত।
اذهبوا بقميصي هذا
আর তোমরা আমার এই কামিস নিয়ে বাবার কাছে যাও এবং তার চেহারায় লাগাও। সেখানেও কি শব্দ এসেছে? তা হলো কামিস। জুব্বা এগুলো হলো সুন্নতী পোশাক। রাসুল (সা) তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের পোশাক কি হবে? সহিহ আল বোখারী ৫৭৯৩নং হাদীস।
আল্লাহর রাসুল (সা)কে জিজ্ঞেস করা হলো, মুহরিমে যিনি হজ্জ করবে তিনি কি কি পরতে পারবেন? আর কি কি পরতে পারবে না? আল্লাহর রাসুল (সা) জবাব দিয়েছেন_
لا يلبس المحرم القميص ولا السراويل ولا البرنس ولا الخفين
মুহরিম ব্যাক্তি যিনি হজ্জে যাবেন তিনি ইহরাম বাধবেন। তিনি ইহরাম অবস্থায় কামিস পরবে না। সারাওয়িল পড়বে না, বুরনাস পড়বে না, খুফফাইন পরবেনা। অর্থাৎ ইহরাম ছাড়া অবস্থায় মুসলমান অধিকাংশ অবস্থায় কি পরবে? এগুলো পড়বে, তার মানে সারাওয়িল, মানে সালওয়ার।
সুতরাং তাঁরা কিভাবে বলে যে ইসলামে কোরআন, সুন্নাহ ভিত্তিক পোশাক নেই, যা খুশি তা পরতে পারবে। তা যদি শার্ট, প্যান্ট পড়া যায়, তাহলে মৌলভী সাহেব এই বার ফতুয়া দাও যে, হিন্দুদের ধুতিও পড়া যাবে। সমস্যা কি? শার্ট, প্যান্ট যদি পড়া যায়, জায়েজ হয়ে যায়, তাহলে ধূতি পরতে সমস্যা কি? ধূতিটা একটু লম্বা করে পড়লো, টাকনু সহ ঢেকে। টাকনু সহ ঢেকে যদি ধুতি পড়ে, তো সমস্যা কি? এসব হচ্ছে অরিয়েন্টালিস্টদের ফতুয়া। এগুলো বাংলাদেশে চলবেনা।
পরিশেষে বলবো পোশাক চার প্রকার ____
১) لباس السنه - সম্পূর্ণ সুন্নাত তরিকায় যে লেবাস।এটা যদি পরিধান করেন, আপনি প্রতি শ্বাসে সওয়াব পেতে থাকবেন।
২) لباس التقوي - তাক্বওয়ার পোশাক (اقرب الي السنة) যা সুন্নতের কাছাকাছি, পুরুপুরি সুন্নাত নয়। তবে কোনো বিজাতির স্বাদৃশ্য তাতে নেই। যেমন কাটা কুরতা, ফারা কুরতা, পায়জামা এগুলো আমরা পরিধান করি। এতে কোনো সমস্যা নেই।
৩) لباس الكراهية - অপছন্দনীয় পোশাক। যেমন প্যান্ট শার্ট। এগুলো পরিধান না করাই উচিৎ। তবে যারা অফিস আদালতে যায় পোশাক এর কারনে বিরম্মনা সহ্য করতে হয়, তাদের জন্য বলি- কি আর করবেন? ওজর হিসাবে পড়বেন। তবে টাকনুর নিচে যেন কাপর না যায়।
৪) لباس الحرام - হারাম পোশাক। যেমন, জুব্বা যদি টাকনুর নিচে যায়, টাই পরিধান করা এটা বিজাতীদের সংস্কৃতি থেকে এসেছে।ধুতি পরিধান করা বিজাতীদের সংস্কৃতি থেকে এসেছে, তারপর টুপিবিহীন পাগরী পড়া, পুরুষের জন্য লাল, হলুদ কাপর ব্যবহার করা- এগুলো হারাম পোশাক। আল্লাহ যেন আমাদেরকে সুন্নাত তরিকায় চলার তাওফিক দান করেন। আল্লাহুম্মা আমিন।